স্রোতের টানে

    তেজগাঁও রেলস্টেশনে এসে বসে আছি অনেকক্ষণ। এদিক ওদিক দেখছি কিন্তু অপেক্ষা করছি নির্দিষ্ট একটি ট্রেনের জন্যে যেটি আমাকে হেলেদুলে ঘুমিয়ে ঝিমিয়ে কসবা নিয়ে যেতে পারবে। একজন ঘোষিকা এই ট্রেন সেই ট্রেন এমনকি মেইল ট্রেন আসার ঘোষণা দিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত ট্রেনটির আগমনের ঘোষণা করছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার লোকাল ট্রেনটি সকাল আট ঘটিকায় তেজগাঁও রেলষ্টেশনের প্লাটফর্মে এসে পৌছানোর কথা থাকলেও এখন আটটা উনিশ মিনিট বেজে গেছে। চারিদিকে হুলুস্থুল অবস্থা। এতক্ষণ সবকিছু পর্যবেক্ষন করে এখন বলতেই পারি রেলষ্টেশনে কেউ কারও নয়। এখানে মানুষ মানুষের যত না আপণ বোঝা বস্তা পোটলা ব্যাগ তার থেকে অনেক বেশি আপণ।
    গল্প বানিয়ে আর স্বাদ পাচ্ছিলাম না অনেকদিন। কেমন যেন একঘেঁয়েমি ভাব চলে এসেছিল। কয়েকমাস মোটামোটি কিছুই না লিখে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। মাথায় যাও কয়েকটি গল্প এসেছিল লিখতে গিয়ে খেয়াল করলাম আবর্জনা লিখছি। কিছুদিন ঘরে যখন বন্দি জীবন যাপন করছি একদিন এক সাংবাদিক বন্ধু তানভীর হঠাৎ উদয় হল কয়েকমাস পর। কোত্থেকে উদয় হয়েছিল জানতে ইচ্ছা হয়নি তাই জিজ্ঞেস করিনি। বন্ধু আমার ক্রাইম ডিমার্টমেন্টের লোক। লেখালেখি প্রসঙ্গে যখন আলাপ হচ্ছিল বন্ধুর একটি কথা “ঘর ছেড়ে একটু দূরে বাইরের দুনিয়ায় ঘুরে আয় দোস্ত, আমাদের দেশটা গল্পের গোডাঊন, তোকে শুধু খুঁজে নিতে হবে, এদেশের বাস্তব বড় কঠিন” কেন জানিনা মনে গাঢ় দাগ কেটে গেল।
    সেই বন্ধুর দেয়া তথ্য অনুযায়ী আজ ঘুম ভেঙে রওনা দিলাম কসবা’র উদ্দেশ্যে। ট্রেন কিছুক্ষণ হল টঙ্গী পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। তাল নির্দিষ্ট – ঝুক্কুরু ঝুক্কুরু ঝুক্কুরু ঝুক, ঝুক্কুরু ঝুক্কুরু ঝুক্কুরু ঝুক। অষ্টজংগল নামক গ্রামের এক বাসিন্দা নাম জাকির মুন্সি। জাকির মুন্সি হঠাৎ একদিন গ্রামের এক নেতাকে নিজেদের বাড়ির উঠোনে কুঁপিয়ে মেরে ফেলল। প্রথম জিজ্ঞাসাবাদেই জাকির মুন্সির স্বীকারোক্তি পাওয়া যায় সে সজ্ঞানে খুন করেছে এবং সে বিচার বিভাগের কাছে নিজের শাস্তি দাবী করেছে। কিন্তু আমার আকর্ষনের বিষয় অন্যস্থানে। জাকির মুন্সি একবারের জন্যও কাউকে বলেনি বা স্বীকার করেনি যে সে কেন খুন করেছে। আমার সাংবাদিক বন্ধুর বদৌলতে এতটুকু তথ্য নিয়ে যাচ্ছি যদি কোন গল্প বের হয়।
    লেখক হওয়ার বাসনায় আমি আজ একপ্রকার বেকার। দুইটি মোটামোটি মূল্যবান টিউশনি থাকায় জীবন কোন মতে তিনবেলা খেয়ে আর কিছু বইপত্তর কিনে রেহাই পেয়ে আছে। তাও মাস শেষে হাতের তালু শূন্য থাকে বিনা বাধায়। ফলশ্রুতিতে আমার এই লোকাল ট্রেনে যাত্রা শুভ হচ্ছে। আসলে লোকাল ট্রেন আর এই সাহায্যকারী টিটি থাকায় কত হাজার মানুষের রক্ষা হয় তা শুধু তারাই জানে। আমিও এখন জানি যখন একশত পচাঁশি টাকার ভাড়া টিটির হাতে ত্রিশ টাকা গুঁজে দিয়ে যেতে পারছি।
    ট্রেনে লোকমুখে জানতে পারলাম অষ্টজংগল গ্রামে যাওয়ার পদ্ধতি দুইভাগে বিভক্ত। প্রথম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে আবার উল্টো পথে বাসযোগে ঘণ্টা দেড়েক ফিরে এলে বেবীট্যাক্সি পাওয়া যায়। যা কালো ধোঁয়ায় গ্রামের সবুজের সাথে তামাশা করতে করতে পৌছে দেবে অষ্টজংগলে। দ্বিতীয়, কসবা’র কাছাকাছি একটি ভাঙ্গা ব্রীজ থাকায় অত্র ব্রীজ অতিক্রমের সময় ট্রেন গতি অনেকখানি কমিয়ে আনে। তখন সুবিধাজনক জায়গা দেখে নেমে গেলেই হয়। তারপর বাস ধরে আধঘণ্টা গেলে বেরীট্যাক্সির দ্যাখা পাওয়া যাবে। আমি সময় ও অর্থ বাঁচাতে দ্বিতীয় উপায় বেছে নিলাম এবং ট্রেনের গতি সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পরে পাঁচ-ছয়টি ডিগবাজী গুনে সোজা বিলের কাঁদায় পা ডোবালাম।
    গ্রীষ্মের দূপুর। মাথায় উপরে চোখ রাঙিয়ে অস্থির তাকিয়ে থাকা সূর্যের কড়া শাসনে তখন আমার গলা শুকিয়ে শুকনো পাতার মতন কড়করা। পাশের এক পুকুরে প্যান্টের কাঁদা পরিষ্কার করে কাছের এক টং থেকে পানি এবং এক কাপ চা গিলে মুড়ির টিন নামে খ্যাত বাসে চেপে রওনা দিলাম। আলীবাগ নামক জায়গা থেকে বেবীট্যাক্সিতে উঠে পৌছে গেলাম শালদা নদীতে। সেখানে নদীর উপর দিয়ে চলে গেছে রেল লাইন। রেল লাইনের উপর দিয়েই হেঁটে পাড় হতে হয় প্রায় দুইশ ফুট নদী, পাড়াপাড়ের জন্যে আর বিকল্প কোন ব্যাবস্থা নেই। পাড় হলে তবেই মেলে অষ্টজংগল গ্রামে ঢোকার একমাত্র পথ।
    লাউআকৃতির গ্রাম। লাউয়ের তিনদিক ভারত পরিবেষ্টিত লেজের দিকটি বাংলাদেশের পুরো মানচিত্রের সাথে যুক্ত। শালদা নদীরও বাংলাদেশে আগমন ভারত থেকে। পৌছাতে পৌছাতে তখন প্রায় বিকাল। রোদ নেমে যাচ্ছে ধীরে। গ্রামটির অন্যতম আকর্ষন তিনদিকেই ভারতের পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। তানভীর তার পত্রিকার একজন নিয়মিত সংবাদদাতা আবেদিন ভাইকে আমার আগমনের খবর আগেই দিয়ে রাখায় নির্ধারিত স্থানে তাকে পেয়ে গেলাম।

    আবেদিন ভাই আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন তার পাশের রুমে। খাওয়ার পর বিশ্রাম শেষে গোধূলী বেলার প্রান্তে আবেদিন ভাইকে নিয়ে হাটাহাটি করতে বের হলাম।
    “আপণার আসার কারণ তানভীর আমাকে বলেছে। তানভীর আর আমি অনেক বছরের পরিচিত।” গ্রামের একমাত্র পাঁকা রাস্তায় পাশাপাশি হাটতে হাটতে বলেন আবেদীন।
    “আমিও ঢাকায় খুব বোরিং হয়ে গিয়েছিলাম, কিছুই লেখা হচ্ছিল না, তানভীরই আমাকে এখানে আসার বুদ্ধিটা দিল” উত্তর দেই আমি। “খুনের ব্যাপারটায় আপণার কি মনে হয় আবেদীন ভাই?”
    আবেদীন রাস্তায় চোখ রেখে চলতে চলতে বলতে থাকেন। “আমি আসলে দুইজনের সাথেই পরিচিত ছিলাম। আমি পত্রিকার মানুষ, আর এইটি একটি ছোট্ট গ্রাম। একজন অন্য একজনকে চেনা খুব কঠিন বিষয় না। জাকির মুন্সি আমার মতে নিরীহ একজন মানুষ। আর অন্যদিকে যাকে খুন করল মানে আজিজ, উঠতি নেতা হলে যা হয়। আজিজও তার থেকে ব্যাতিক্রম ছিল না। হাতে হঠাৎ ক্ষমতা পেলে যা যা নেতা পাতিনেতারা করতে পারে পুরো গ্রাম জুড়েই সে তাই করত। কিন্তু জাকির মুন্সির হাতে খুন হওয়ার ঘটনাটি আসলেই অস্বাভাবিক। জাকির মুন্সি কাউকে খুন করতে পারে আমাদের কারও সেটা বিশ্বাস হয় না, জাকির মুন্সি নিজেই তো সব স্বীকার করলো। অথচ খুনের কারণ নিয়ে সে একবারও মুখ খুলল না। আমরাও কখনও ওদের দুইজনের কোন গ্যাঞ্জামের কথা শুনিনি। আসুন চা খাই।” আবেদীন আমাকে নিয়ে একটি চায়ের দোকানে ঢোকেন। বোঝা গেল আবেদীনকে সবাই কম বেশি সমাদর করে।

    চায়ের দোকানে জাকির মুন্সির বাড়ির সবথেকে কাছে যার বাড়ি সেই বাদলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আবেদিন। বাদলও তেমন উৎসাহজনক কোন তথ্য দিতে পারলো না। শুধু একবার ইঙ্গিত করলো যে জাকির মুন্সির বউয়ের সাথে আজিজের অবৈধ কিছু থাকলেও থাকতে পারে। আর যাই হোক জাকির মুন্সির বউ রূপসী। এতটুকুই। আর কোন তথ্য পাওয়া গেল না।
    চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে আবেদীনকে বললাম “চলেন একটু নদীর পাড়ে হেঁটে আসি।”
   শুনে আবেদিন হেসে ফেললেন। হাসির কারণ জানতে চাইলে আবেদিন হাসি মুখেই উত্তর দিলেন “আপনারা লেখক কবি সাহিত্যিকদের নদী গাছপালা না হলে যে জমে না সেটা তো জানা কথা। হাসলাম এই কারণে যে আমি নিজেও ঠিক করে রেখেছিলাম আপণাকে নদীর ধারে নিয়ে যাবো, এই যে টর্চ নিয়েই এসেছি।” ইশারায় টর্চ দেখায় আবেদিন।
    নদীর পানিতে পা ভেজাতে যাবো এমন সময় আবেদিন বাধা দিল। হাতের টর্চ জ্বালিয়ে দেখিয়ে বলল, “শালদা নদীর দুইটি ব্যাপার বার মাস থাকে। এক, এই প্রচুর স্রোত আর পানিতে প্রচুর বালি ও কাঁদা।”
    আসলেই তাই। টর্চের আলোতে স্পষ্ট বোঝা গেল নদীর কোথাও পরিষ্কার এক ফোঁটা পানি নেই, পুরোটাতেই কাঁদাপানি। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে নেমে আসা নদী বলেই হয়ত এত বালি ও কাঁদা।
    নদীর পাড় থেকে ফিরে এসে আমি আর আবেদিন ভাই বিলের মাঝে একটি কালভার্টের উপর পা দুলিয়ে বসলাম। কথাবার্তার এক পর্যায়ে টর্চের আলো জ্বেলে দূরের বিলের মাঝে একটি বাড়ি দেখালেন। গ্রামের সাধারণ কৃষকদের ঘরবাড়ি যেমন হয় তেমনটাই মনে হল দেখে।
    আবেদিনকে জাকির মুন্সির বাড়ির উদ্দেশ্য করে বললাম, চলেন যাওয়া যাক।
    “এখনই যাবেন এই রাতে? সকালেও যেতে পারি চাইলে।” আবেদিন উত্তরে জানালেন।
    “নাহ, এখনই যেতে চাই” জানালাম আবেদিনকে।
    “চলুন তাহলে।”

    বাড়িতে জাকির মুন্সির বউ পারুলকে পেলাম। সত্যি সুন্দরী। চট করে চোখ ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এই রুপের সাথে অনেকে প্রেম করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক সেক্ষেত্রে আজিজের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকলে থাকতেই পারে। বাড়িতে আর কেউ থাকে না। জাকির মুন্সি থানায় আটক। বাড়িতে পারুল একা। আবেদিন পারুলেরও পরিচিত। আবেদিন আমাকে পারুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে এবং বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, পারুল, আমাদের অন্তত বলুন কি ঘটেছিল। যা যা ঘটেছিল সব বলুন। জাকির মুন্সি যেহেতু স্বীকার করেছে সে খুন করেছে বিচার তো তার হবেই এমনকি ফাঁসিও তার নিশ্চিত। কিন্তু যদি খুনের কারণটা জানা যায় তাহলে হয়ত একটা সুযোগ থাকে সাঁজা কমিয়ে আনার। আপনারা কিছু যদি না বলেন সেই সুযোগটাও নষ্ট হয়ে যাবে। জাকির মুন্সির ফাঁসিই হবে।
    ছাব্বিশ সাতাশ বছর বয়সী পারুল প্রথম থেকেই থমথমে মুখে বসে ছিল। তার কোন অনুভূতিই বোঝার উপায় নেই। আমার কথার এই পর্যায়ে হঠাৎ-ই সে কাঁদতে শুরু করে। একপর্যায়ে ঘরের বেড়ায় পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে হাত পা বিছিয়ে কান্নায় ঢলে পরে। কিন্তু আবেদিন বা আমি কেউই খুনের কোন কারণ জানতে পারলাম না।

    সকালে ঘুম থেকে উঠে নির্ধারিত সময়ে আবেদিনের সাথে রওনা দিলাম থানার দিকে। আজ দূপুর পর্যন্তই সময়। এর মধ্যে যা করার করে ফেলতে হবে নয়ত হাতের বাইরে চলে যাবে সব। দূপুরের পর জাকির মুন্সিকে চালান দেয়া হবে। জাকির মুন্সির সাথে কথা বলার ব্যবস্থা আবেদিন করে রেখেছে।
    থানায় জাকির মুন্সির কাছে আমাকে আলাদা ভাবে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হল। হয়ত মফস্বলের থানা বলেই তা সম্ভব হল। জাকির মুন্সি দেখতে আসলেই নিরীহ একজন বেচারা। রোদে পোড়া চামড়া, পেটা শরীর। শারীরিক পরিশ্রমী মানুষেরা এমন সুঠাম দেহের অধিকারী হয়ে থাকে। চোখে মুখে তার কৃষকের গন্ধ লেগে আছে। তেত্রিশ-চৌত্রিশ বছর বয়স হবে তার। একটি আকাশী রঙের লুঙ্গি আর সাদা চেক হাফ হাতা শার্ট গায়ে এক কোণায় জড়ো হয়ে বসে আছে। দেখলে তাকে কোন দিক থেকেই খুনী বা খুন করতে পারে এমন ধারনা হয় না। অনেক চেষ্টা করেও কোন কথা তার কাছ থেকে জানতে পারলাম না। নিরাশ হয়ে চলে আসব ভাবছি তখন বললাম, কাল রাতে আপণার বাড়িতে গিয়েছিলাম। আপনার বউটা একা থাকে, আপণার জন্যে অপেক্ষা করে আছে, কান্নাকাটি করছে। আপণার বিচার হবেই জাকির মুন্সি। কিন্তু সত্য ঘটনাটা জানলে সাঁজা কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। আপনার বউকে জিজ্ঞেস করলাম সে শুধু কাঁদলো আর এখানে আপনি চুপ করে আছেন। আপনার বউয়ের কথা একবার ভাবেন।
    জাকির মুন্সি ক্রোধে ফেটে গেল হঠাৎ। “আমার বউয়ের চিন্তা আপনের করন লাগবো না” বলে যেভাবে চট করে তেঁতে উঠেছিল সেভাবেই তার ক্রোধ মিলিয়ে গেল।
    তারপর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জাকির মুন্সি বলতে শুরু করল।

    আমি চাষবাস কইরা খাই। তিন বছর হইছে বিয়া করছি। কামাই বাড়াইতে পারি নাই দেইখা পোলাপাইন লই নাই এহনও। প্রথমে বুঝি নাই, বুঝছি অনেক পরে – বিয়ার কইরা বউ ঘরে তোলনের পর থেইকাই আজিজ আমার লগে সুখ দুঃখের আলাপ পারা শুরু করে। চায়ের দোকানে গেলেই দাম দিতে দিত না। কইত – খাও জাকির ভাই তুমি হইলা গিয়া আমার বড় ভাই। তারপর মাঝে মাঝে বাড়ি আওন শুরু করলো। দুইদিন যাইতে না যাইতে আমার বউরে নাম ধইরা ডাকা শুরু করলো। চা খাইতে চাইত। বউ চা বানাইয়া খাওয়াইতো। আজিজ লগে এইডা অইডা কিন্না লইয়া আইতো। আমি তহনও কিছু বুঝি নাই। একদিন বউ কইলো আজিজের চাওন মোডেও ভাল ঠেকতাছে না, ওর চউখ আমার শরীরের উপ্রে ঘোরে খালি। আমি বাড়ি না থাকলেও আমারে খোজতে বাড়ি যাওন শুরু করলো প্রায়ই। আমি পরে খেয়াল করলাম। আসলেই তো তাই। আমি তহন আজিজরে পাত্তা দেওন কমাইয়া দিলাম। আজিজও আস্তে আস্তে বিগড়াইন্না শুরু করলো। কিন্তু আজিজের বাড়ি আওন তো বন্ধ করতে পারলাম না। আজিজ তহন রাইত কইরা আওন শুরু করলো। আজাইরা প্যাঁচাল পারতো হুদাই, আমার বউরে খুজত। আমিও মিছা কতা কওয়া শুরু করলাম যে বউ ঘুমায়। একদিন রাইতে আজিজ লগে আরও তিনজন লইয়া অনেক রাইতে আইলো। মাল টাইনা আইছিল। আমি দরজা খুলতেই ওরা চাইর জন ঘরে ঢুইকা দরজা আটকাইয়া দিল। তিনজন আমারে যাইত্তা ধইরা বাইন্দা ফালাইয়া পিস্তল ধইরা খারাইয়া রইল। বউ আমার এই অবস্থা দেইখা আর কোন টু শব্দ করে নাই। আজিজ আমার বউরে লইয়া ভিতরের ঘরে ঢুইকা দরজায় খিল দিল। আমি বান্দা অবস্থায় মাডিতে পইরা খালি আওয়াজ হুনলাম। কান বন্দ করতে পারি নাই।
    এরপর আরও মাস দুই আজিজ আইছে। পরের দিকে একলাই আইত। আমারে পাহাড়া দেওনের লাইগা কাউরে আনত না। লগে সব সময় বন্দুক থাকত। সব তো খুয়াইলাম, লজ্জার কতা মান ইজ্জত সব খুয়ানের কতা গ্রামের কাউরে মুখ ফুইটা কিছু কইতে পারি নাই। ভাবছি আজিজ থামবো একদিন। থামে নাই। ডরে আমার বউডা পাগলের মতন হইয়া যাইতে থাকলো। থানায় যাওনেরও সাহস হয় নাই। একদিন রাইতে আজিজ আইলো। বউডার জ্বর। কইতে গেলে হুস নাই। পাও ধরলাম আজিজের। মানলো না। শাবোল দিয়া ঐদিন শ্যাষ করছি ওরে।

    আমি থানা থেকে বের হয়ে সোজা শালদা নদীতে পা চুবিয়ে বসে রইলাম। চরম ঘোলা পানির ধুলো বালি কাঁদার মাঝে সময় স্রোতের টানে কোথায় যে চলে গিয়েছিল জানা নেই।    

© Shihab Shahariare Khan ||